রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:২৯ অপরাহ্ন

সিন্ডিকেটেই চলছে নিত্যপণ্য নিয়ন্ত্রণ!

সিন্ডিকেটেই চলছে নিত্যপণ্য নিয়ন্ত্রণ!

রিন্টু আনোয়ার:

স্বস্তির খবর নেই বাজারের কোনো পণ্যেই। চাল-তেল থেকে মাছ-সবজিসহ প্রায় সব নিত্যপণ্য নিয়েই বাজারে চলছে কারসাজি। নোংরা চাতুরী। এক দিকে মুক্তবাজার অর্থনীতি, আরেক দিকে সরকার মাঝেমধ্যে চাল-তেলসহ বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের দাম ঠিক করে দেয়। এতে বাজারে উল্টো বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ে এবং দাম আরো বাড়ে। বিষয়টি রীতিমতো মশকরা। ক’দিন আগে সরকার ভোজ্যতেলের দাম বেঁধে দেয়ার পর ব্যবসায়ীরা নির্ধারিত দামে তেল বিক্রি তো করেনইনি। উপরন্তু, চলমান বেশ ক’টি কোম্পানির তেল হঠাৎ বাজার থেকে উধাও হয়ে গেল।

সরকারি ঘোষণার পর অনেকেই আশাবাদী ছিল, ভোজ্যতেলের বাজার স্থিতিতে আসবে। কিন্তু হয়েছে আরো বিপরীত। এক হিসাবে জানা গেছে, দেশে ভোজ্যতেলের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ২০ লাখ টনেরও বেশি। অভ্যন্তরীণভাবে উৎপাদন হয় সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টন। বাকিটা আমদানি করতে হয়। সাত-আটটি প্রতিষ্ঠান অপরিশোধিত তেল আমদানি ও পরিশোধন করে বাজারজাত করে। তাদের কারো কারো বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট তৈরি করে দাম বাড়ানোর অভিযোগ পুরাতন। কোনো পণ্যের দাম বেঁধে দিলে তা কার্যকরের দায়িত্ব সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ওপর বর্তায়। আবার মুক্তবাজার অর্থনীতির সংজ্ঞায় কোনো পণ্যের দাম সরকার চাপিয়ে দিতে পারে না। বরং বাজার তদারকি বাড়াতে পারে। সরকারি প্রতিষ্ঠান টিসিবিকেও এ কাজে লাগানো যায়। অথচ সরকার বাজার অর্থনীতির কথা বলছে আবার আন্তর্জাতিক বাজারে সব জিনিসের দাম বেড়ে গেছে উল্লেখ করে অসাধু ব্যবসায়ীদের নিত্যপণ্যের দামে কারসাজি করার ন্যায্যতা দিয়ে দিচ্ছে। যেমন, ভোজ্যতেলের বাজার নিয়ন্ত্রণে একদিকে দাম বেঁধে দেয়া হয়েছে; আরেক দিকে, বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের বাজারেও প্রভাব পড়েছে।’ কী দাঁড়াল অর্থটা?

আবার অন্যদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সচিবসহ সংশ্লিষ্টরা বারবার মিটিং করছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কি পরিমাণ বাড়ছে, আর দেশের বাজারে কি পরিমাণ বাড়ছে? যেটা আমদানি করে আমাদের চলতে হয় সেটা তো আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর ভরসা করতেই হবে। কিন্তু এ সুযোগটা নিয়ে যারা বাড়তি মুনাফাবাজি করছে তাদের কী হবে? বাণিজ্যমন্ত্রী বা সরকারের কারো পক্ষ থেকে এসব প্রশ্নের যথাযথ বা পরিষ্কার জবাব কখনো আসে না। বরং জবাবের নামে দেয়া হয় গোঁজামিল। সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ব্যবসায়ীরা কথা দিয়ে কথা রাখছে না, তিনি আগুনের মধ্যে বাস করছেন। তার এই বক্তব্যে জাতির কাছে কী মেসেজ এলো?

বাংলাদেশে একবার কোনো পণ্যের দাম বাড়লে তা আর কমে না। কমতে চায় না। পাশাপাশি, দেশের বাজারে সিন্ডিকেটের কারসাজি যে, কোনো দিন বন্ধ করা যাবে না সেটা মন্ত্রীর বক্তব্য থেকেই অনুমান করা যাচ্ছে।

ভরা মৌসুমেও চাল থেকে শুরু করে ডাল, ভোজ্যতেল, মাছ-গোশতসহ একাধিক পণ্য ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। প্রায় সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে হচ্ছে বাড়তি দরে। এতে রীতিমতো ‘নাভিশ্বাস’ উঠেছে সীমিত আয়ের মানুষের। যেকোনো ব্যক্তিগোষ্ঠীর হাতে বাজারের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা চলে গেলে ভোক্তার স্বার্থ ক্ষুণœ হবেই। তাই ভোক্তার সুরক্ষা দিতে হলে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের দরকার প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি করে দেয়া। কিন্তু দেশের কোথাও সেটি হচ্ছে না। কিছু ব্যক্তি-গোষ্ঠীর হাতেই নিত্যপণ্য নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে। ফলে এরা কারসাজি করলে তখন সরকারের আর করার কিছু থাকে না। মুক্তবাজার অর্থনীতি থাকবে কিন্তু তার মানে এই নয়, এর মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের যা খুশি তাই করার সুযোগ পাবে। বিশ্বের অনেক দেশে মুক্তবাজার অর্থনীতি থাকলেও সরকারের হাতেই সব সময় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাও থাকে।

দেশে এখন বোরো ধানের ভরা মৌসুম। আগে বোরোর মৌসুম এলে চালের দাম কমতির দিকে থাকত। কিন্তু গত ১-২ বছর ধরে পাল্টে গেছে বাজারের স্বাভাবিক এই চিত্র। ভরা মৌসুমেও ঊর্ধ্বমুখী চালের দাম। রাজধানীর বাজারে তো বটেই, গ্রামগঞ্জেও চালের বাড়তি দামের কারণে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

চলতি মাসের শুরু থেকেই বাজারে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। বর্তমানে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৪ টাকায়। আর সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭২ টাকায়। ভালো মানের সরু (নাজিরশাইল ও জিরাশাইল) চাল বিক্রি হচ্ছে ৭৮ থেকে ৮০ টাকায়। টিসিবি ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের বাজার দর হিসাবে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ৭ টাকা বেড়েছে। এর মধ্যে সরু চালের দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি।

সম্প্রতি চাল নিয়ে চালবাজির বিরুদ্ধে আর দেরি না করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সংশ্লিষ্টদের তিনি এই নির্দেশটি দিয়েছেন মন্ত্রিসভা বৈঠকে। গণমাধ্যমে সংবাদটি এসেছে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের বরাতে। তিনি জানান, চালের মজুদদারদের কোনো ছাড় না দিতে বলা হয়েছে। নির্দেশটি বিশেষত ৩ মন্ত্রী বাণিজ্য, খাদ্য, কৃষি এবং তাদের সচিবদের প্রতি। একই দিন ‘বোরো ২০২২ মৌসুমে অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ ও বাজার মনিটরিং সংক্রান্ত অনলাইন মতবিনিময় সভায় খাদ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, মজুদদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে করণীয় যা আছে তার সবই করা হবে। পাশাপাশি দেশের বাজার থেকে চাল কিনে প্যাকেটজাত করে তা আবার বিক্রি করা যাবে না। এ জন্য একটি আইন করা হচ্ছে। এ সময় দেশের বাজারে চালের আকস্মিক মূল্যবৃদ্ধির জন্য দেশের বড় কয়েকটি শিল্প গ্রুপকে দায়ী করেছেন। ব্যবসায়ীদের মজুদের অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে মন্তব্য করে কৃষিমন্ত্রী বলেছেন, বড় বড় মিল ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ভালো মুনাফার আশায় ধানের মজুদ শুরু করায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন জেলায় আমরা অভিযান চালাচ্ছি।’ প্রশ্ন হচ্ছে, সেটা হবে কোন আইনে বা কিভাবে? চলমান চালবাজদের দমানো হবে কোনো আইনে?

চলতি ভরা বোরো মৌসুমেও চাল বাজারের অস্থিরতা নিয়ে নানান প্রশ্ন ঘুরছে জনমনে। একদিকে ভরা মৌসুম। আরেক দিকে বাজারে চালের কোনো ঘাটতি-কমতি নেই। সাপ্লাইও ভরপুর। এর পরও কেন দাম নিয়ে চাতুর্য? নাই-নাই হাহাকার? গলদটা কোথায়? নেপথ্যে কোন কারসাজি?-এ ধরনের নিষ্পত্তিহীন প্রশ্নের মাঝে এলো প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশটি। চাল নিয়ে চলমান চালবাজিটি ওপেন সিক্রেট। সবারই কম-বেশি জানা। চাল সিন্ডিকেটিংয়ের স্টাইলটি ভিন্ন। এরা চাল কিনছে না। কিনছে ধান।

সেই ধান মজুদ করার অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নেমেছে বড়-বড় কোম্পানি। বাজারে এখন যে চাল বেচাকেনা হচ্ছে এগুলো গত বছরের পুরাতন চাল। তাহলে নতুন ধানগুলো কই?

সংবাদ সূত্রে জানা গেছে, সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সেগুলো কিনে গুদাম ভরছে নামি-দামি বিভিন্ন করপোরেট হাউস। রড, সিমেন্ট, মেডিসিন, শেয়ারবাজার, গার্মেন্ট, ম্যানপাওয়ার থেকে শুরু করে বিস্কুট, চানাচুর, মুড়ি, চিনি, তেল, ডাল কিচ্ছু ছাড়ছে না তারা। সাধারণ মানুষ চাল-ডালসহ নিত্যপণ্যের দামে বেসামাল হয়ে গেলেও এবং সরকার নিয়ন্ত্রণের শত চেষ্টায় কাহিল হয়ে পড়লেও এই ব্যবসায়ীরা কিন্তু পুরো বেসামাল। তাদের কার কাছে কী পরিমাণ ধান-চাল মজুদ আছে সেই হিসাব উদ্ধারের সুযোগ নেই বললেই চলে। নিঃশব্দে এই মনোপলিটা করে চলছে তারা।

তাদের এই কারসাজি জানতে-বুঝতে না পারায় একটি ঘোর তৈরি হয়। প্রতি বছর এই সময় বাজারে চালের দাম কমে এলেও এবার কেন উল্টো চিত্র- প্রশ্নটি সাধারণ মানুষকে ম্যাজিকের মতো চক্করে ফেলে দেয়। সাধারণ মানুষ কেন, মিল মালিকদেরও চোখে শর্ষে ফুল দেখার দশা হয়। বড় বড় ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্টরা যে চাল ও ধানের বাজারে এমন গাঁথুনি গেড়েছে, তাদের বুঝে উঠতে অনেক সময় লেগে যায়। তার ওপর মিলার ও মৌসুমি ধান ব্যবসায়ীদের কারসাজিও কম নয়, তাদের এই আচরণ পুরনো।

কখনো সরবরাহ সঙ্কট, কখনো ধানের দাম বেশি বলে চালের দাম বাড়ানোর অজুহাত তৈরিতে ঢের অবদান তাদের। এর মধ্যে আছে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা, তারা তো আরো বেপরোয়া। করোনাকালে অন্যান্য ব্যবসায় ধরা খেয়ে ধান ব্যবসায় ঝুঁকেছেন এরা। কৃষকের থেকে কম দামে কিনে বাসাবাড়িতে এমনকি গোপনে গোডাউন ভাড়া নিয়ে ধান মজুদের চালবাজি রপ্ত করে এরই মধ্যে বেশ মালদার তারা।

অবশ্য করপোরেট হাউস, মৌসুমি ব্যবসায়ী, মিলার সবার বুদ্ধি এবং ধান্ধা এখানে অভিন্ন। চাল মজুদ করলে নষ্ট হয়ে যায় বলে তারা নজর দিয়েছে ধানের দিকে। কারণ ধান নষ্ট হয় না, অনায়াসে দীর্ঘদিন মজুদ করে রাখা যায়। সময় বুঝে মজুদকৃত ধান বিক্রি বা দ্রুত চাল তৈরি করে বিশাল টাকা হাতানোর বুদ্ধিটি বেশ লাগসই। অপ্রিয় এবং নিষ্ঠুর সত্য হচ্ছে এখানে মৌসুম-অমৌসুম বিষয় নয়, মৌসুম-মৌসুমের নির্ধারক এখন তারাই। অপ্রিয় এবং নিষ্ঠুর সত্য হচ্ছে, সরকার এই মজুদদারদের সঙ্গে পেরে উঠছে না। অবিরাম অভিযানে সরকার তাদের জরিমানা করছে। কিছু গুদাম সিলগালা করছে। কিন্তু, মজুদদারির বিরুদ্ধে যে কঠোর শাস্তির বিধান আছে তা কার্যকর করছে না বা করতে পারছে না। কেন করছে না বা পারছে না, সেটি অবশ্যই প্রশ্ন।

২০১১ সালে জারি করা বিধিতে বলা হয়, সরকারের অনুমোদন ছাড়া কোনো ব্যবসায়ী এক টনের বেশি খাদ্যসামগ্রী তার অধিকারে রাখতে পারবে না। অনুমোদিত ব্যবসায়ীদের মধ্যে পাইকারি ব্যবসায়ী সর্বোচ্চ ৩০০ টন ধান অথবা চাল ত্রিশ দিন পর্যন্ত মজুদ রাখতে পারবেন। খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ১৫ টন ধান অথবা চাল ১৫ দিন মজুদ রাখতে পারবেন। চালকল মালিকরা পাক্ষিক ছাঁটাই ক্ষমতার ৫ গুণ ধান সর্বোচ্চ ৩০ দিন মজুদ রাখতে পারবেন। পাক্ষিক ছাঁটাই ক্ষমতার দ্বিগুণ চাল সর্বোচ্চ ১৫ দিন মজুদ রাখা যাবে। হাস্কিং মিল মালিকরা সর্বোচ্চ ১০০ টন ১৫ দিন মজুদ রাখতে পারবেন।

উল্লেখ করা জরুরি, ১৯৭৪ সালে বিশেষ ক্ষমতা আইনটির একটি কারণ ছিল। আইনটি করাই হয়েছিল মূলত মজুদদারদের দমানোর উদ্দেশ্যে। সেই আইনে মজুদদারদের মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ নানা শাস্তির বিধান আছে। কিন্তু চলতি অভিযানে কোনো মজুদদারকে তেমন কোনো দণ্ড দেয়ার খবর নেই। অথচ আইনটি কিন্তু এখনো তামাদি হয়নি। এটা নিয়ে এখন আলোচনা হওয়া জরুরি। এ ছাড়া, ভোক্তা অধিকার আইনে সর্বোচ্চ ৩ বছর কারাদণ্ড বা দুই লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। সেটি কার্যকর করার দৃষ্টান্তও নেই। তাহলে দমন কী দিয়ে, কীভাবে হবে? চলতি অভিযান নিয়ে ব্যবসায়ীদের কারো কারো অসন্তোষও আছে। ‘মজুদদার’ শুনতে তারা অপমানিত বোধ করেন। শব্দটিকে ‘গালমন্দ’ মনে হয়। তবে, স্টকার-স্টকিস্ট বললে মন্দ লাগে না। কী পরিমাণ পণ্য স্টকে বা মজুদে রাখা যাবে- তা সরকারই পরিষ্কার করার দাবি তাদের। দাবির যৌক্তিকতা আছে। আবার এ সংক্রান্ত আইনসহ নির্দেশনাও আছে। কী পরিমাণ পণ্য মজুদ রাখা যাবে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা রয়েছে খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনে। প্রয়োজনে এর সংস্কার আনা যায়।

অসাধু ব্যবসায়ী বা কোনো মহল যেন এ সুযোগে কোনো ধরনের কারসাজি করতে না পারে- টিসিবি, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সেদিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে।
এখনো সংগ্রহ মৌসুম শেষ না হলেও এবার সরকার লক্ষ্য পূরণ করতে পারবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এ ছাড়া চাল আমদানি ও রফতানি সংক্রান্ত খাদ্য অধিদফতরের বিভিন্ন সিদ্ধান্তও চালের দামের ক্ষেত্রে প্রভাবক হিসেবে ভূমিকা রাখছে।

দুর্ভাগ্যের বিষয়, সরকার যখন যেমন সিদ্ধান্তই নিক না কেন- সাধারণ কৃষক তার সুবিধা ভোগ করতে পারে না। চালের মতো একই কথা প্রযোজ্য সবজির ক্ষেত্রেও। রাজধানীতে যেখানে গড়ে কেজিপ্রতি ৬০ থেকে ৮০ টাকার নিচে সবজি পাওয়া যায় না, সেখানে কৃষক তার উৎপাদন খরচও তুলতে পারে না বেশির ভাগ সময়। এ অবস্থায় সুষ্ঠু সরবরাহ ব্যবস্থা, মধ্যস্বত্ব ভোগীদের দৌরাত্ম্য কমানো, সর্বোপরি বাজার মনিটরিংয়ে জোর দেয়ার বিকল্প নেই। মনে রাখতে হবে, চাল ও সবজিসহ নিত্যপণ্যের বাড়তি দামের চাপ বেশি পড়ে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্তের ওপর।

বাজারে দ্রব্যমূল্য অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বৃদ্ধি পাওয়া ঠেকাতে সরকারের পক্ষ থেকে কখনো সুনির্দিষ্ট কোনো স্থায়ী নীতিমালা গ্রহণ করা হয়নি। দেশের মানুষকে ভালো রাখতে হলে, নিরাপদ করতে চাইলে বাজার নিয়ন্ত্রণের বিষয়টির গুরুত্ব দেয়া খুব জরুরি। এখনই সময়, যথাযথ একটি প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রাখা। যদিও, এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি এলাকায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সীমিত আকারে অভিযান চালানো হয়েছে, কিন্তু সেটির স্থায়ী ও যথাযথ রূপ এখনো লক্ষ করা যাচ্ছে না।

বাজার নিয়ন্ত্রণ ও বাজারে স্বস্তি ফিরিয়ে আনা অবশ্যই সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন সমন্বয়। সে দক্ষতা মূলত সরকারকেই দেখাতে হবে। সরবরাহনীতি ও বাজারকে স্থিতিশীল রাখতে সব ধরনের ঘরোয়া মজুদ করার প্রবণতা থেকে সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে। প্রশাসন ও সাধারণ মানুষকেও এ ক্ষেত্রে একযোগে কাজ করতে হবে।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877